রেলের শহর সৈয়দপুর । শহর জুড়ে রেলের লাল স্থাপনা গুলোর জন্য আমি সৈয়দপুরকে বলি “ দ্য রেড সিটি অফ বাংলাদেশে “ । হেরিটেজ ভ্রমণে ২০১৬ সাল থেকে এ অবধি সৈয়দপুরে গেছি তিন দফায় । একবার গেছি শুধুই ঐতিহাসিক রেলওয়ে কারখানা দেখতে ।
কারখানা ভ্রমণে দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে ব্রিটেনের রানীর ব্যবহৃত শত বছরের প্রাচীন একটি স্টেট ক্যারেজ বা প্রেসিডেন্ট সেলুন । বিল্ডার্স প্লেটে লেখা আছে ১৯২৭ সালে ব্রিটেনের একটি কারখানায় তৈরি হয়েছে এই সেলুন । মূলত ব্রিটেনের রানী ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য সেলুনটি ভারতে আনা হয় ।
দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থান রেলওয়েকে এই সেলুনটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার । এর নম্বর ১২৬৫ । স্বাধীনতার পর দেশের অনেক রাষ্ট্র প্রধান এই প্রেসিডেন্ট সেলুনে ভ্রমন করেছেন । ১৯৮১ সালে সেলুনটি অকেজো হয়ে পড়লে সৈয়দপুর কারখানায় নিয়ে আসা হয় ।
সেলুনটির উল্লেখযোগ্য দিক হলো এটি সম্পুর্ন কাঠের তৈরি । সেলুনটির ভিতরে আছে প্রেসিডেন্টের শয়ন কক্ষ , তাঁর স্টাফদের জন্য আলাদা দুটি রুম । সেই সময়ের বিলাশ বহুল বাথরুম , বেসিন , শাওয়ার , লাইট , ফ্যান , সুইচ বোর্ড । একটি কনফারেন্স রুম । কারখানার কর্মকর্তাদের কাছে জেনেছি , সাধারন কোচে আটটি চাকা থাকলেও , সেলুনটিতে রয়েছে ১২টি চাকা ।
উপরের সমস্ত তথ্য গুলো জেনেছি বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক বা ডিভিশনাল সুপারিন্টেনডেন্ট (ডিএস)এর কাছে। কারখানায় প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন হয় । প্রেসিডেন্ট সেলুনে যেতেও আলাদা করে অনুমতির দরকার হবে । ২০২০ সালে আমি যখন সেলুনে প্রবেশ করেছি , তখন মেরামতের কাজ চলছিল । রেলওয়ে যাদুঘরেরও কাজ চলছিল । জেনেছিলাম প্রেসিডেন্ট সেলুনটিকে যাদুঘরে রাখা হবে ।
আমার রেলওয়ে কারখানা ভ্রমণ সহজ সাধ্য করেছেন বন্ধু প্রতীম বড় ভাই সৈয়দপুরের সিনিয়র সাংবাদিক ঝন্টু ভাই । ঝন্টু ভাই ভ্রমণে এত সাহায্য নিয়েছি তোমার ধন্যবাদ কি করে দিব বলো তো !
জাতীয় ভাবে রেল দিবস পালন হচ্ছে , চা দিবস পালন হচ্ছে একদিন নিশ্চয়ই হেরিটেজ ট্যুরিজম ডে’ও পালন শুরু হবে । কারন রেল দিবস , চা দিবস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত ।
ছবি গুলো ভালো হয়নি, কারন সেলুনের ভিতরে লাইটের কোন সোর্স ছিল না। টর্চের আলো ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমাকে খুব অল্প সময়ে ভিডিও ও ছবি তোলার কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছিল।
লেখক: প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক ও পর্যটক।
Leave a Reply